শনিবার ৮ মার্চ ২০২৫ - ১৯:০৮
মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিবাদী শাসন ধ্বংস হয়ে যেত

মরহুম আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী নাসেরী বলেছেন, “সত্য হলো- মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ হত, তাহলে সায়োনিস্ট শাসন ধ্বংস হয়ে যেত। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের প্রিয় দেশ ইরান ঐক্যবদ্ধ। অসংখ্য মুসলিম দেশের মধ্যে শুধুমাত্র একটি জাতিই সায়োনিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মরহুম আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী নাসেরী, যিনি হাওজায়ে ইলমিয়াতে নৈতিকতার শিক্ষক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন, তার একটি নৈতিক পাঠে “ধর্মীয় শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ” বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। তার বক্তব্যের মূল অংশ নিম্নরূপ: 

মুমিনদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ইহুদিরা
পবিত্র কুরআনের সূরা মায়িদার ৮২ তম আয়াতে বলা হয়েছে: 
"لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِلَّذِینَ آمَنُوا الْیَهُودَ"
(নিশ্চয়ই আপনি মুমিনদের প্রতি সবচেয়ে শত্রুতাপূর্ণ লোক হিসেবে ইহুদিদের পাবেন)। 

বর্তমান সময়েও আমরা দেখতে পাই যে তারা কীভাবে মুসলমানদের হত্যা করে এবং নির্যাতন করে। 

ইহুদিরা হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধর। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দুজন স্ত্রী ছিলেন: সারাহ এবং হাজেরা। হাজেরা থেকে হযরত ইসমাইল (আ.) জন্মগ্রহণ করেন, যিনি মহানবী (সা.)-এর পূর্বপুরুষ। আর সারাহ থেকে হযরত ইসহাক (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। হযরত ইসহাক (আ.)-এর পুত্র হযরত ইয়াকুব (আ.)। হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর বারোজন পুত্র ছিলেন, যাদের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন ইয়াহুদা। বেশিরভাগ বনি ইসরাইলের নবী তার বংশধর। এই কারণে তাদের ইহুদি বলা হয়। 

বনি ইসরাইল নামটিও ব্যবহৃত হয়, কারণ ‘ইসরা’ অর্থ বান্দা এবং ‘ইল’ অর্থ আল্লাহ; অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা। ইসরাইল হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর উপাধি। এছাড়াও তাদের সায়োনিস্ট বলা হয়, কারণ সেই অঞ্চলে সায়োন নামে একটি পাহাড় রয়েছে, যেখানে হযরত সুলাইমান (আ.) এবং অনেক নবীর কবর রয়েছে। 

ইহুদিদের শরয়ী ও তাকওয়ীনী জিল্লাত ও অপমান
কুরআনের আয়াত অনুযায়ী, ইহুদিদের মুসলমানদের প্রতি শত্রুতা নিশ্চিত। তবে আল্লাহ তায়ালা একটি সুসংবাদও দিয়েছেন যে, মুমিনরা যেন তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা না হারায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে, বিশজন মুসলমান হাজারো শত্রুর বিরুদ্ধে দাঁড়াত। যদি মুমিনরা দৃঢ় ও অবিচল থাকে, আল্লাহ তাদের সাহায্য করবেন। 

সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১১১-এ বলা হয়েছে: 
"لَنْ یَضُرُّوکُمْ إِلَّا أَذًی وَإِنْ یُقَاتِلُوکُمْ یُوَلُّوکُمُ الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا یُنْصَرُونَ"
(তারা তোমাদের সামান্য কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। আর যদি তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, তাহলে তারা পিঠ ফিরিয়ে পালাবে এবং তাদের কোনো সাহায্য করা হবে না)। 

ইহুদিদের ভয় পাবেন না। তারা মুমিনদের কোনো বড় ক্ষতি করতে পারবে না। তারা কষ্ট দিতে পারে, কিন্তু আল্লাহ মুমিনদের সাহায্য করবেন। যদি তারা লড়াই করে, তাহলে তারা মুমিনদের প্রতিরোধের ভয়ে পিঠ ফিরিয়ে পালাবে। সম্প্রতি বছরগুলোতে, অনেক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা কোনো বড় সমস্যা তৈরি করতে পারেনি। 

যখন আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী, তখন আমাদের কোনো কিছুর ভয় নেই। তাই, চিন্তা করবেন না। যদিও তারা ভয় সৃষ্টির জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালায়, তবুও আপনারা ভয় পাবেন না। কারণ হয় তারা যুদ্ধ করবে না, আর যদি যুদ্ধও করে, তাহলে কুরআনে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা পরাজিত হবে। 

পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে: 
"ضُرِبَتْ عَلَیْهِمُ الذِّلَّةُ أَیْنَ مَا ثُقِفُوا إِلَّا بِحَبْلٍ مِنَ اللَّهِ وَحَبْلٍ مِنَ النَّاسِ"
(তাদের উপর অপমান চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানেই তাদের পাওয়া যাবে, তারা অপমানিত হবে; যদি না তারা আল্লাহর রজ্জু এবং মানুষের রজ্জু ধরে)। 

ইহুদিরা দুনিয়ায় অপমানিত। অপমান দুই প্রকার: শরয়ী ও তাকওয়ীনী। শরয়ী অপমান অর্থ আমাদের দায়িত্ব তাদের ছোট করা। কিন্তু এই আয়াতে তাকওয়ীনী অপমান বোঝানো হয়েছে; অর্থাৎ আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন যে তারা সর্বদা অপমানিত হবে, যদি না তারা ফিরে আসে এবং সত্য বিশ্বাস গ্রহণ করে বা বড় শক্তির সাহায্য নেয়। তারা নিজেরা সম্মান অর্জন করতে পারবে না। 

যদি মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হত, তাহলে সায়োনিস্ট শাসন ধ্বংস হয়ে যেত
এই আয়াতের প্রেক্ষাপট হলো, ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইহুদিদের একজন বড় নেতা আবদুল্লাহ ইবনে সালাম মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার পরে কিছু লোক তার অনুসরণ করে ইসলাম গ্রহণ করে। ইহুদি নেতারা একত্রিত হয়ে আবদুল্লাহর কাছে গিয়ে বলল: “হয় তোমার ধর্মে ফিরে আস, নাহলে আমরা তোমাকে ধ্বংস করব। তুমি ইসলাম গ্রহণ করে আমাদের সম্মান নষ্ট করেছ।” 

ওই ঘটনার প্রেক্ষাপটে এই আয়াত নাযিল হলে আব্দুল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান। ফলে তারা তার কোনো কিছুই করতে পারেনি। 

সত্য হলো, মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ হত, তাহলে সায়োনিস্ট শাসন ধ্বংস হয়ে যেত। আলহামদুলিল্লাহ, ইরান ঐক্যবদ্ধ। অসংখ্য মুসলিম দেশের মধ্যে শুধুমাত্র একটি জাতিই সায়োনিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। একমাত্র সত্য ঐশ্বরিক ধর্ম হলো শিয়া, যার কেন্দ্রস্থল আমাদের প্রিয় ইরান।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha